যে কারনে আমি আওয়ামী লীগকে ভোট দিবো না

কারনঃ তারা দেশের শিক্ষাব্যবস্থার শৃঙ্খলা নষ্ট করে ফেলেছে।
এই সরকারের আমলে প্রায় সকল পাবলিক পরীক্ষায় প্রতি বছরই ব্যাপক মাত্রায় প্রশ্নফাঁস হয়েছে। শিক্ষাব্যবস্থাকে এতোটা ঝাঁকুনি খুব সম্ভবত আর কখনো সহ্য করতে হয়নি। মন্ত্রী থেকে শুরু করে সরকারপক্ষীয় নগণ্যতম ব্যক্তিবর্গ প্রশ্নফাঁস হয়েছে বলে কিছুতেই মানতে চাননি। যদিও দেশের প্রতিনিধিত্বশীল সবগুলো পত্রপত্রিকায় এ নিয়ে প্রমাণ উপস্থাপণপূর্বক প্রচুর লেখালেখি করা হয়েছে। ব্যাপক মাত্রায় প্রশ্নফাঁসের ফলে শিক্ষাব্যবস্থার সামগ্রিক শৃঙ্খলা নষ্ট হয়ে গিয়েছে। সচেতন অভিভাবকগণও ক্রমাগত ফাঁস হওয়া প্রশ্নের পেছনে ছুটেছেন। এরকমটা আগে কখনো দেখা যায়নি।
শিক্ষার্থীদের উপর নানারকম পরীক্ষানিরীক্ষা চালানো হয়েছে। একবার বলা হয় পিএসসি পরীক্ষা নেয়া হবে না, আবার বলা হয় নেয়া হবে। দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গ একবার বলেন নৈর্ব্যক্তিক থাকবে না, পরে বলেন থাকবে...ইত্যাদি। নতুন নতুন শিক্ষাপদ্ধতি প্রবর্তন করা হলেও শিক্ষকবৃন্দকে যথাযথভাবে প্রস্তুত করা হয়নি। এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে শিক্ষার্থীদের উপর। 
তথ্যসূত্রঃ
০১। দৈনিক প্রথম আলো ‘পঞ্চম শ্রেণীর সমাপণী পরীক্ষা এবছর থেকেই আর হবে না’
https://www.prothomalo.com/bangladesh/article/895687
০২। দৈনিক মানবকণ্ঠ ‘জেএসসিতে এমসিকিউ থাকছে না’
https://www.manobkantha.com/%E0%A6%8F%E0%A6%AE%E0%A6%B8%E0…/
০৩। দৈনিক কালেরকণ্ঠ ‘জেএসসিতেও এমসিকিউ থাকছে’
http://www.kalerkantho.com/print-edition/…/2018/05/04/632220
০৪। দৈনিক প্রথম আলো ‘এমসিকিউ থাকছে, নম্বর কমতে পারে জেএসসিতে’
https://www.prothomalo.com/bangladesh/article/1497776
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, বিশেষ করে সরকারি কলেজগুলোতে নিয়মিত ক্লাস নেয়ার প্রবণতা মারাত্নকভাবে কমে গেছে। ফলে মফস্বলের শিক্ষার্থীরা আর ক্লাসে যায় না, বরং কোচিং-এ যায় কিংবা প্রাইভেট পড়ে। এই গুরুত্বপূর্ণ ব্যপারটি নিয়ে সরকারের কারো মধ্যে কোনরকম উদ্বেগ দেখা যায়নি। কোনরকম জবাবদিহিতার বালাই নেই বলে শিক্ষকবৃন্দ ক্লাসের চেয়ে অর্থকরী কোচিং-এর দিকে মনোযোগ দিচ্ছেন বেশী।
তথ্যসূত্রঃ
০১। দৈনিক যুগান্তর ‘কলেজ শিক্ষার মানে অধোঃগতি’
https://www.jugantor.com/news-archive/window/2016/…/03/43312
বিগত কয়েক বছরে শিক্ষাবোর্ড ভেদে পাশ-ফেলের অস্বাভাবিক পার্থক্য লক্ষ্য করা গেছে। যেমন, ২০১৭ সালের এসএসসি পরীক্ষায় কুমিল্লা বোর্ডে পাশের হার ছিল ৫৯%, এবং ঢাকা বোর্ডে এটি ছিল ৯০%। পার্থক্য প্রায় ৩১%!!! শুনতে তুচ্ছ মনে হলেও শিক্ষাবিদগণ ব্যপারটিকে মোটেও স্বাভাবিক ভাবছেন না।
তথ্যসূত্রঃ
০১। দৈনিক প্রথম আলো ‘কোন বোর্ডে পাশের হার কত?’
https://www.prothomalo.com/bangladesh/article/1168156
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণার জন্য বরাদ্দ থাকে যৎকিঞ্চিত। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছুই থাকে না। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা হচ্ছে না। উৎপাদিত গ্রাজুয়েটদের মান নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন অনেকে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বন্ধা করে দেয়ার জন্য আর কাকে দায়ী করবো?
তথ্যসূত্রঃ
০১। বণিকবার্তা ‘গবেষণায় পথ হারিয়েছে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়’
http://bonikbarta.net/bangla/news/2017-08-27/129308
০২। দৈনিক মানবজমিন ’৪১ বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণায় বরাদ্দ নেই’
http://www.mzamin.com/details-archive2016.php?mzamin=99427
০৩। দৈনিক প্রথম আলো ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গবেষণায় অনাগ্রহী’
https://www.prothomalo.com/bangladesh/article/207888
সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে খরচ বাড়ছে। বিশ বছর মেয়াদি ইউজিসি কৌশলপত্রের মধ্যে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নিজ খরচে চলতে হবে বলে যে নির্দেশনা দেয়া আছে, তারই প্রভাব এখন পরিলক্ষিত হচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন ভর্তি হতে ১৫,০০০-২৫,০০০ টাকা খরচ হয়। এছাড়া প্রতি বছরই ৮-১০ হাজার টাকা খরচ করে ভর্তি হতে হয়। নম্বরপত্র ফি, পরীক্ষা ফি, কেন্দ্র ফি, সেশন ফি ইত্যাদি ফি দিতে দিতে সবাই অতিষ্ট। সবগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে একই অবস্থা বিরাজমান। 
তথ্যসূত্রঃ
০১। দৈনিক প্রথম আলো ‘সরকারি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বেতন বাড়ছে ৫ গুণ’
https://www.prothomalo.com/economy/article/1128196
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে পরিণত করে ফেলা হয়েছে। যে যেমন পারছে, সুযোগ বুঝে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বিভিন্ন অজুহাতে টাকা আদায় করে নিচ্ছে। এর বিপরীতে সরকারের কোন হস্তক্ষেপ নেই। বরং বেশীরভাগ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ড দখল করে বসে আছে সরকারদলীয় লোকজন।
তথ্যসূত্রঃ
০১। দৈনিক আমাদের সময় ‘মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়’
http://dainikamadershomoy.com/todays-paper/last-page/149115
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রতিবেদন অনুসারে, বর্তমানে দেশে স্বাক্ষরতার হার ৭২.৯ শতাংশ। সরকারি এই প্রতিষ্ঠানটির প্রতিবেদনের সত্যতা নিয়ে প্রচুর সন্দেহ রয়েছে। তা যদি সত্যিও হয়, অবশিষ্ট নিরক্ষর মানুষজনকে শিক্ষিত করে তোলার ব্যপারে সরকারের কোন পরিকল্পনা নেই। বয়স্ক শিক্ষা নিয়ে কোন উদ্যোগ পরিলক্ষিত হয়নি। এমনকি, ছিন্নমূল শিশুদের মূলধারার শিক্ষার সাথে যুক্ত করা নিয়ে মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট কোন কর্মকান্ড আমরা দেখছি না। এক তৃতীয়াংশ মানুষকে শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত রেখে দেশ কোন হিসেবে এগোবে বা কোনদিকে এগোবে! 
তথ্যসূত্রঃ
০১। দৈনিক যুগান্তর ‘বয়স্ক শিক্ষা প্রকল্পে শুধুই ব্যর্থতা’
http://www.jugantor.com/old/last-page/2014/09/08/144802
০২। দৈনিক প্রথম আলো ‘মধ্যবিত্ত দেশ হবো কিন্তু শিক্ষায় এগোব না?’
https://www.prothomalo.com/opinion/article/1459351
আদালতের সুস্পষ্ট নির্দেশনার পরও কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রসংসদ নির্বাচনের কোন উদ্যোগ নেই। ক্রমাগত সমালোচনার মুখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ছাত্রসংসদ নির্বাচনের আয়োজন করা হবে বলেছেন। কে জানে, আদৌ হবে কিনা!
তথ্যসূত্রঃ
০১। দৈনিক কালেরকণ্ঠ ‘নেতৃত্ব তৈরীর পথ রুদ্ধ’
http://www.kalerkantho.com/print-edition/…/2017/05/18/498505
০২। দৈনিক প্রথম আলো ‘ডাকসু নির্বাচন কবে হবে?’
https://www.prothomalo.com/bangladesh/article/1336316
২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে শিক্ষাখাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে মাত্র ১১.৪১ শতাংশ! যদিও শিক্ষাসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মহল থেকে ক্রমাগত দাবী তোলা হয়েছিল ন্যুনতম ২৫ শতাংশ অর্থ বরাদ্দ দেয়ার জন্য। কিন্তু এসব কথায় কোনরকম কর্ণপাত করা হচ্ছে না। 
তথ্যসূত্রঃ
০১। বিবিসি বাংলা ‘বাংলাদেশে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যে ব্যয় দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে নিচে, পরিণাম কী?’
https://www.bbc.com/bengali/news-44654523
০২। ডেইলি স্টার ‘বাজেটে গুরুত্বহীন শিক্ষাখাত’
https://www.thedailystar.net/…/%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%9C%…
আমার মনে হয়, এই নমুনাগুলো দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ‘শিক্ষা’ সম্পর্কে সরকারের সদিচ্ছার অভাব বা অদক্ষতা প্রমান করে। এরপরও যদি আমি সরকারকে সমর্থন করি, সেটা হবে আমার নির্বুদ্ধিতা।