ধর্ম যার যার, উৎসব সবার।

ধর্ম যার যার, উৎসব সবার। এটা একটা অবাস্তব কথা। একের ধর্ম পালন অন্য ধর্মের কারো কাছে উৎসব হতে পারেনা। পৃথিবীতে প্রচলিত অধিকাংশ ধর্মই রেসিস্ট। প্রায় প্রত্যেক ধর্মই অন্য ধর্মের অস্তিত্ব ও রীতিনীতিকে অস্বীকার করে। মুসলিমদের গরু জবাই হিন্দুদের জন্য উৎসব হতে পারেনা, হিন্দুদের পৌত্তলিকতা তো মুসলিমদের জন্য শিরক, যা ক্ষমার অযোগ্য গুনাহ। তাহলে আপনি কিভাবে আশা করতে পারেন ধর্মান্ধরা একে অপরের এই রীতিনীতিকে মেনে নিবে? কেউ কেউ মেনে নিচ্ছেন, সহনশীল হচ্ছেন। তাদেরকে অভিনন্দন। কারণ আপনারা বুঝে গেছেন, মেনে নেয়া ছাড়া কিছুই করার নাই। গুনাহ হলেও কিংবা নরকে যাওয়ার চান্স থাকলেও কিচ্ছু করতে পারবেন না, কারণ আপনার নৈতিক ও আদর্শিক অবস্থান সামাজিকভাবে আপনাকে উগ্র হতে দিবেনা। যতই পরকাল নিয়ে শঙ্কিত থাকেন, বুঝে গেছেন যে ইহকালে ক্যারেক্টারে দাগ পড়াটা আরো ভয়ানক। সবাই ছি ছি করবে, পলিটিক্স না করলে পুলিশ ধরে নিয়ে যেতে পারে, ফেসবুকেও লাইক কমে যেতে পারে। এরপরও মাঝে মাঝে এই সহনশীলদের খোলস বেরিয়ে আসে "যদি/কিন্তু/তবে" এইসব শব্দের ব্যবহার করে। সেটাও অন্তত মেনে নেয়া যায়। প্রকাশ্য অপরাধের চেয়ে এইসব সুশীল যুক্তিগুলো মোস্ট ওয়েলকাম। 
.
তাহলে কি করা উচিত? যেটা করা উচিত সেটা হচ্ছে, স্লোগানে পরিবর্তন আনা উচিত। কথাটা হওয়া উচিত, "ধর্ম যার যার, দেশ সবার।" আপনি উৎসব করেন বা না করেন, ফূর্তি করেন বা গাল ফুলিয়ে বসে থাকেন, দ্যাট ডাজন্ট ম্যাটার। ধর্মটাকে তিন চুমু দিয়ে বুকশেলফের উপরের তাকে রাখেন, ব্যক্তিগতভাবে সম্মান করেন। এইটুকুই। এটাকে জাতীয় ইস্যু বানিয়ে জাতিসত্ত্বার সাথে ভেদাভেদ করবেন না। মনে রাখতে হবে, দেশটা সবার। কি হিন্দু, কি মুসলিম, কি বৌদ্ধ, ক্রিশ্চান, আদিবাসি, নাস্তিক, সংশয়ী, এসবে দিনশেষে কিছুই যাবে আসবেনা। দেশে একটা দূর্ভিক্ষ লাগলে হিন্দুর পূজার প্রসাদ নাকি মুসলমানের কুরবানী গরু এইসব বাছবিচার করা ছাড়াই দুই হাতে গিলবেন। সেটা ভালোই জানা আছে। পেটে লাথি পড়লে এই সব ধর্মান্ধতা জানালা দিয়ে উড়ে পালাবে। কথায় আছে, সুখে থাকলে ভূতে কিলায়। এখন সবাই সুখে আছে, পকেটে টাকা আছে, হাতে কাজ আছে, চাপাতিতে ধার আছে, মোবাইলে পর্ণ আছে। সুতরাং, লাইফ ইজ অ্যাট ইটস বেস্ট। এটাকে গিফট হিসেবে না নিয়ে পরীক্ষা হিসেবে নিতে শিখেন। সহনশীলতার পরীক্ষা। 
.
আমার চাওয়াটা খুব সরল। উৎসব করতে না চাইলে জোর করে উৎসব করার দরকার নাই। কিন্তু ধার্মিক হওয়ার আগে মানুষ হন, মসজিদ মন্দির চেনার আগে দেশ চিনেন, পীর দেবতা চেনার আগে এই দেশের মানুষ গুলোকে চিনেন। দেশ ভালো থাকলে আপনিও ভালো থাকবেন।