বীরাঙ্গনাদের আমাদের অজানা কাহিনী

তসলিমা নাসরিনের 'নির্বাচিত কলাম' বইটিতে তসলিমার একটা ফুফু ছিলেন, যিনি বীরাঙ্গানা। দেশ স্বাধীন হওয়ার তিনি ফেরত আসলে উনার পরিবার এবং সমাজ কেউই উনাকে মেনে নেয়নি। স্বাধীনতার পরবর্তী কয়েক বছর ডিসেম্বর মাস বাংলাদেশের জন্য উৎসবের মাস ছিল। বাংলাদেশে আরও অনেক বিশেষ দিন আছে, হয়তো সামনে আরও অনেক বিশেষ দিন আসবে। কিন্তু কোনটাই ১৬ই ডিসেম্বরের সমান হবে না।
সমাজের দেওয়া অপমান আর লাঞ্চনা সইতে না পেরে তসলিমার ঐ বীরাঙ্গনা ফুপু এক ডিসেম্বরে আত্মহত্যা করেন। বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে। এমন পরিণতি আরও কতজন বীরাঙ্গনার হয়েছে তা আমাদের অজানা।
আমাদের দেশে মুক্তিযোদ্ধারা রিকশা চালান। পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধারা ভিক্ষা করেন। মেয়ের বিয়ে দেওয়ার জন্য মুক্তিযোদ্ধা মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হাত পাতেন। জামাত শিবিরের ক্যাডারেরা মুক্তিযোদ্ধাদের লাথি মারেন। সচিবের গলা ধাক্কার অপমান সইতে না পেরে মুক্তিযোদ্ধা আত্মহত্যা করেন।
কর্পোরেট ব্যবসায়ী মিড়িয়া আছে। পত্রিকার কাটতি বাড়ানোর জন্য ডিসেম্বর আসলে মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে পত্রিকাতে ধারাবাহিক প্রতিবেদন ছাপানো হয়। কোন কোন চ্যানেল বিজ্ঞাপনের ফাঁকে ফাঁকে মুক্তিযোদ্ধাদের দুরবস্থার প্রামাণ্য চিত্র দেখায়। লাইট, ক্যামেরা, একশ্যান..........
যে মুক্তিযোদ্ধাটি আত্মহত্যা করেছেন উনার বাড়ি চট্টগ্রামের সাতকানিয়া। বাংলাদেশের মিনি পাকিস্তান। স্বাধীনতার আগে এবং পড়ে যেখানে এখনও কোনদিন আওয়ামিলীগ নির্বাচনে জিতেনি। স্বয়ং শেখ মুজিবের আমলেও নয়।
সাঈদির রায়ের পর সেখানকার মাদ্রাসায় পাকিস্তানের পতাকা উড়ানো হয়েছিল। পাকিস্তান ক্রিকেটে জিতলে সেখানে ফটকা আর আতশবাজি ফুটানো হয় হয়। জামাত শিবির ভোট পায় ১ লক্ষ ৮ হাজার আর আওয়ামিলীগ ভোট পায় ৪০ হাজার। এখনো ৭০% লোক মনেপ্রাণে পাকিস্তানি সেই এলাকার। কোন এলাকা থেকে তিনি মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিলেন ভাবুন একবার।
এমন লোককে আত্মহত্যা করতে হয় এই দেশে। রাষ্ট্র কোন বিবৃতি দেয় না। শিল্পপতি মারা গেলে প্রধানমন্ত্রী বিবৃতি দিতে পারেন। মুক্তিযোদ্ধার অপমানে আত্মহত্যায় মুজিবকন্যা চুপটি মেরে যান। আরেকজন শহীদের সন্তান এবং সর্বজনশ্রদ্ধেয় জাফর ইকবাল স্যারকে আওয়ামিলীগের এম.পি চাবুক মারার হুমকি দেন। তখনও নেত্রী চুপ থাকেন। নেত্রীর প্রশাসনের শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তা নারী ধর্ষনকে দুষ্টামি বলে। নেত্রী ব্যস্ত থাকেন। নেত্রীর মন্তব্য শোনা যায় না।
আমরা ইস্যু বানায়। দুদিন পর নতুন ইস্যু আসবে। আমরা সেটা নিয়ে নাচানাচি করব। ঐ সচিব তার চাকরিতে যথারীতি বহাল থাকবে। চাটুকার আর তৈল প্রদানকারী ভাঁড়েরা আছেন। অনলাইনে এগিয়ে যাওয়ার মাইকিং করে লোক হাসানোর জন্য। দেশও বসে থাকছে না। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, দেশ এগিয়ে যাবে।