এক বিশাল গোলকধাঁধাঁয় আঁটকা পড়েছে বাঙালি সমাজ
যাকাতের কাপড় নিতে গিয়ে ২৭ জনের মৃত্যু, এই নিউজটা চোখে আসতেই প্রচন্ড হতাশ হতে হল। মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হলেও অর্থব্যবস্থা যে পরিমিত ভাগ হয়নি, আমাদের সমাজে শ্রেণিভেদটা যে এখনো প্রকট তা খুব ভালো করেই বুঝা যায়। বর্ধিত মাথাপিছু আয়ের আড়ালে অর্থব্যবস্থার বিরাট এক অংশ দখল করে আছে উচ্চবিত্তরা। নিন্মবিত্তরা আছে ঠিক একই রকম। হয়তো নামে মাত্র মৌলিক চাহিদা গুলো পাচ্ছে ওদের কেউ কেউ। তাও উৎপাদন ব্যবস্থার এক বিশাল অংকের টাকা উঠছে সেই উচ্চবিত্তদের কোষাগারেই। উন্নতি কই? অর্থনৈতিক মুক্তি কই?
মানুষ পতনের তীব্র চেতনা থেকে একটা আনন্দ খুঁজে পায়। যখন তারা দেখে চারিদিকে পালানোর পথ নেই, কিংবা আসন্ন পতনের একেবারে বিপদসীমার সামনে দাঁড়িয়ে সে, তখন একধরনের সান্ত্বনা খুঁজে নেয় নিজের মাঝে। হোক সেটা ব্যর্থ সান্ত্বনা, কিন্তু তবুও মানুষের নির্লিপ্ত আনন্দের উৎস হিসেবে যথেষ্ট।
আমার প্রায়ই মনে হয় ঠিক এই নির্লিপ্ত আনন্দের মাঝেই বাঙালির বসবাস। এদের মাঝে একশ্রেণি বিশ্রীভাবে নিরাসক্ত। আমার ভয় হয় এই নিরাসক্তি একদিন বাঙালির অভ্যাস না হয়ে যায়। যদিও ধীরে ধীরে এই ভয়টাই বাস্তবায়িত হচ্ছে আমাদের সমাজে। সামাজিক অবক্ষয় বা অনিয়ম গুলো আজ আর আমাদের চোখে লাগেনা। মানুষের মৃত্যু কিংবা অপঘাত গুলো আজ ঠিক ততটাই স্বাভাবিক হয়ে যাচ্ছে যতটা স্বাভাবিক দৈনন্দিন ভাত খাওয়া, বই পড়া কিংবা সরল শিশুর মত ব্যাগ কাঁধে স্কুলে যাওয়া। এই নিরাসক্তির সুযোগ নিয়ে একদল বুদ্ধিজীবি টাকার বিনিময়ে বুদ্ধি বিক্রি করে সমস্যার ব্যাখ্যা করে যাচ্ছে, জন্ম দিচ্ছে অন্যান্য সমস্যা। কিন্তু সমাধানের রাস্তা একেবারেই অচেনা থেকে যাচ্ছে। দিনশেষে উন্নতি? প্লাসে মাইনাসে মাইনাস।
কিন্তু আমি নিজের কথাও বলতে পারি। এতক্ষণ সমস্যা আবিষ্কারেই নিয়োজিত থাকলাম। নতুন সমস্যা আবিষ্কার করে হতাশার জন্ম দিচ্ছি। চূড়ান্ত হতাশায় ডুবে নিজেকে সান্ত্বনা দিচ্ছি। এভাবেই……………
এক বিশাল গোলকধাঁধাঁয় আঁটকা পড়েছে বাঙালি সমাজ। প্রতিবছর যাকাতের কাপড় দানে এই মৃত্যু কিংবা হত্যার ঘটনা আমাদের অভ্যাস হয়ে যাচ্ছেনা তো? এমনকি অন্যসব মৃত্যু? হত্যা? অপঘাত? পানির মূল্য লিটারপ্রতি ১৫ টাকা। মানুষের মূল্য কেজি প্রতি কত? কে নির্ধারণ করবেন? আছেন কেউ?