আমাদের সংবিধানে জাতীয় পতাকা ব্যবহারের নিয়ম

জাতীয় পতাকা ব্যবহারের অনেকগুলো নিয়ম লিপিবদ্ধ করা আছে আমাদের সংবিধানে। তার মধ্যে একটা হলো;-
"পতাকা কোন ব্যক্তি বা জড় বস্তুর দিকে নিম্নমুখী করা যাবে না।"
আমরা অনেকেই এই নিয়মগুলি জানি না কিংবা জানার সুযোগও হয় না। আগেও বিভিন্ন সময় নানা ঘটনার কারণে জাতীয় পতাকার অবমাননার প্রসঙ্গটি উঠে এসেছিল কিন্তু সেগুলোর প্রেক্ষাপট ভিন্ন ছিল তাই সবাই সহমত জানিয়েছিলেন।
আমি ভেবে নিলাম যে ব্যাক্তিটি জায়নামাজ হিসেবে পতাকাটি ব্যবহার করেছিলেন তিনি হয়তো নিয়মটি জানেন না। অথবা পতাকাকে জায়নামাজের বিকল্প হিসেবে ভাবাটা উনার কাছে অবমাননা মনে হয় নি।
যদিও আমরা নিয়মের তেমন ধার ধারি না কিন্তু বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে আমাদের কাছে নিয়মটা আশ্চর্য এর জনক হয়ে যায়। আর যেহেতু অনেক ধরনের অনুভূতির দেশ বাংলাদেশ তাই সেখানে সবকিছুতে অনভূতিতে আঘাত লাগবে এটাই স্বাভাবিক। তার চেয়ে বড় কথা কোন অনুভূতিটা আপনাকে বেশি স্পর্শ করছে? ধর্মীয় অনুভুতি নাকি দেশপ্রেম?
যাদের ধর্মানুভূতি বেশি তাদের কাছে ব্যাপারটা খুব স্বাভাবিক কিন্তু যাদের কাছে দেশপ্রেমটা বড় তাদের কাছেও অনুভূতিতে আঘাত লাগাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়।
ইউরোপের দেশগুলোতে দেখা যায় তাঁরা স্যান্ডেল অথবা জুতায় পতাকার ট্যাটু, ছবি ব্যবহার করেন।
এধরণের ব্যাপারগুলোতে তাঁদের তেমন কোন মাথাব্যাথা নেই। তেমনি তাঁদের ধর্ম নিয়ে কটূক্তিতেও তাঁরা খুব একটা মাথা ঘামান না। সোজা কথায় ধর্মটাকে ইউরোপিয়ানরা কোনভাবেই নিজেদের অনুভুতির অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেন না।আমি বলছি না আমার দেশের পতাকাকেও জুতার ট্যাটু বানানো হোক। আমি সহনশীলতার উদাহরণ দেখানোর জন্য এটা বললাম।
আমাদের দেশে এমনিতেই ধর্মকে কেন্দ্র করে লেখালেখির কারণে অনেককে প্রাণ দিতে হয়েছে এবং অনেকে আত্মগোপন করে লেখালেখি করছেন। এখানে পান থেকে চুন খসলেই প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। সবকিছুতে কোন না কোনভাবে ধর্মটাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের একটা হিড়িক পড়ে গেছে। কখনো প্রয়োজন অনুযায়ী কিছুকে হালাল করে নিতে আবার কখনো চাপাতি দিয়ে কোপাতে।
এখন যে মানুষটি আজকে ধর্মের কারনে পতাকাটিকে ব্যবহার করলেন কালকে যদি অন্য ধর্মাবলম্বীদের কেউ তাঁদের মূর্তির পায়ের নিচে কিংবা অন্য কোন কাজে ব্যবহার করেন যেটা তাঁর দৃষ্টিতে কোনভাবেই অসম্মানের নয় তখন আপাত দৃষ্টিতে আজকে যাদের কাছে এটাকে পতাকা অবমাননা মনে হচ্ছে না তাঁরা কি তখনও একমত পোষণ করবেন?
হিন্দুদের মূর্তির স্টেজে পতাকার মত করে কোন চিত্র যদি কেউ করে থাকে অথবা কোন বৌদ্ধবিহারের ফ্লোরে যদি পতাকা আঁকা থাকে তখন কি সেটা সার্বজনীনভাবে গ্রহণযোগ্য হবে?
এরপর হয়তো অনেকে আরও অনেকভাবে নিজেদের মত একটা যুক্তি দাঁড় করিয়ে যেভাবে ইচ্ছে সেভাবে পতাকার ব্যবহার শুরু করবেন যা হয়ত উনার দৃষ্টিতে অবমাননা হবে না আর আমাদের দেশে এখন যেহেতু অনুভূতির একটা প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেছে সে প্রতিযোগিতায় কে কার আগে এগিয়ে যাবেন(কোপাকুপি, ভাঙাভাঙি) আর এটার খেসারত হিসেবে কিছু মানুষের নিরাপত্তার সাথে সাথে একটা দেশের পতাকার সম্মানটাও কি সম্পর্কিত হয়ে যাবে কিনা এটা অবশ্যই ভাববার বিষয়।