মামুলি চুরির ঘটনা বাঙালির অনুভূতিকে এত উত্তপ্ত



মামুলি চুরির ঘটনা বাঙালির অনুভূতিকে এত উত্তপ্ত করে কেন বুঝিনা। চুরির ঘটনায় এ পর্যন্ত চোরের উপর বহু নির্যাতন দেখেছি। কয়েকমাস আগেই ইউটিউবে দেখেছিলাম এক মহিলাকে চুরির অপরাধে প্রায় নগ্ন করে পিটানোর ভিডিও। কয়েক সেকেন্ড দেখেই আর পারিনি। ভিডিওতে কোনো এক বীরপুরুষ বলছিলেন "শালীর মাথায় মার মাথায় মার……" ঐটা এখনো কানে বাজে। আজ শুনলাম সিলেটে চুরির অপরাধে শিশু রাজনকে পিটিয়ে নৃশংস ভাবে হত্যা করা হল! মৃত্যুর আগে পানি চেয়েছিলো। পানিও পায়নি! 
এই হিপোক্রেট বাঙালি সমাজটার উপর আমার প্রবল অনাস্থা। একটা ঘটনার উল্লেখ করি। ১৯৬৯ সালে গণ অভ্যুত্থানের প্রারম্ভে যখন বাঙালি মুক্তির নতুন স্বপ্ন দেখছিলো, সেইসময় সারা দেশে বিশেষ করে দেশের দক্ষিণাঞ্চল খুলনা ও যশোরে দেখা দিয়েছিলো ভয়াবহ গরুচুরির উৎপাত। খুলনার তালা ও ডুমুরিয়া এবং যশোরের কেশবপুর ছিলো গরুর মালিকদের জন্য আতঙ্ক। রাত দিন গরু পাহারা দিয়ে কাটাতো। এক শ্রেণীর দালালদের কাছে ধর্ণা দিলে ওরা হারানো গরু খুঁজে দিতো। গরুর মালিক যদি গরুকে শিকলে বেঁধে রাখতেন তবে উদ্ধারের পর অতিরিক্ত ১৫ টাকা দিতে হত, আর গোয়ালঘরে তালাচাবি আঁটকালে অতিরিক্ত ৫ টাকা! দুইটা গরু একসাথে চুরি গেলে দালালরা খুঁজে বের করার পর একটা গরুর পূর্ণ বাজারদর দিতে হত! কি এক গরুচুরির মাফিয়া সাম্রাজ্য! গরুর মালিক তালা-শিকল ব্যবহার করছে তাই অতিরিক্ত টাকা দিতে হবে খুঁজে দিলে! এছাড়াও, নোয়াখালির লক্ষ্মীপুরে মহাত্মা গান্ধীর ছাগল চুরি হয়ে যাওয়ার ঘটনা তো অনেকেই জানেন। 
উদাহরণ দুটো দিলাম স্রেফ বাঙালির চুরি শিল্পের ঐতিহ্য দেখানোর জন্য। দেশে গণ অভ্যুত্থানের চরম অবস্থায়ও চুরির সুযোগ হাতছাড়া করতে চায়নি এরা। এমনকি চুরি করে সিমেন্টের দাম মেরে খাওয়া সিভিল ইঞ্জিনিয়ারটাও চায়না তার শখের রোলেক্স ঘড়ি চুরি যাক। চুরি করে ক্ষমতায় বসা চেয়ারম্যান এমপিরাও চায়না, অন্য কেউ তাদের আসনটা চুরি করে নিক! চুরির টাকায় স্বর্ণ গহনা বানানো ব্যাঙ্কের ম্যানেজারটাও চায়না একরাতে তার বাসায় চোর হানা দিক। এটাই সবচেয়ে বড় হিপোক্রেসি। গ্রাম বাংলায় চোরকে মারা নিয়ে প্রবাদও প্রচলিত আছে, "চোরের ধুনা"। ধুনা মানে মাইর। কেউ অতিরিক্ত মার খেয়েছে মানে, সে চোরের মত ধুনা খেয়েছে। চোরকে মারতে মারতে মেরে ফেলতে হবে এটাই অলিখিত সংবিধান।
জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে চুরি ঠেকানোতে ব্যর্থ একদল বীরপুঙ্গব যখন ১৩ বছরের শিশুকে চুরি(!) করার অপরাধে লাশ বানিয়ে ফেলে নির্যাতন করে, তখন ঐ লাশের শরীরে সমগ্র বাংলাদেশ দেখা যায়। আমাদের অবস্থা কতটা শোচনীয়, কতটা নৃসংশ আমরা, এমনকি সুযোগের অভাবে যে বাঙালি সমাজের একটা অংশ পাকিস্তানিদের মত বর্বর হতে পারছেনা সেটা নিশ্চিত হয়। সুযোগ পেলে এরাও একদিন খুন ধর্ষণে উত্তাল হয়ে উঠবে। 
এখন, আমার এতকিছু লিখে কি আদৌ কোনো লাভ আছে? শিশুটির আত্মার মাগফেরাত কামনা করবো? হাহাহাহা। চমৎকার। কাউকে পৃথিবীতে বাঁচতে দিলাম না, এই অপরাধবোধ কাটানোর চমৎকার উপায় হচ্ছে "তার আত্মা শান্তি পাক" এই কথাটা বলা। এই বাক্যটির মত ফালতু, অবিবেচক, অযৌক্তিক দায়সারা বাক্য আমার চোখে পড়েনি আর। জানি, এত কিছুতেও লাভ হবেনা। যতদিন বেঁচে আছি এসব দেখে যেতে হবে। সামনে আরো দেখবো। হিপোক্রেসি যেহেতু আমাদের জীনে ঢুকে গেছে এটাই স্বাভাবিক। তাই আমি হতাশায় ভেঙে পড়ছিনা। 
কেউ হিপোক্রেসি দেখায় মানুষকে পিটিয়ে, কেউ হিপোক্রেসি দেখায় আত্মাকে পটিয়ে। গুড জব। ভেরী গুড জব। প্রাউড অব ইউ বাঙালিস। smile emoticon